Wednesday, November 28, 2018

"বিজয়পুর" বিজয়ের গল্প

আজকে আপনাদের শুনাবো কিভাবে মাত্র ৭৭৫ টাকায় আমরা ইন্ডিয়ান বর্ডারের কাছ থেকে ঘুরে আসলাম। চলুন শুরু করি তাহলে :)




কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে আমরা ৮ জন বন্ধু যাত্রা শুরু করি নেত্রোকোণা বড় বাজার রেলওয়ে স্টেশনের উদ্দেশ্যে। ট্রেনের নাম ছিলো "হাওড় এক্সপ্রেস"। ঠিক ১১.৫০ মিনিটে ট্রেন কমলাপুর ত্যাগ করে। ট্রেনের টিকিট পড়েছিলো জনপ্রতি ১৬৫ টাকা। ভোর ৪ টা ৩০মিনিট এ আমরা নেত্রকোনা বড়স্টেশনে পৌঁছে যাই। তখনো ভোরের আলো না ফুটায় আমরা স্টেশনে বসে আড্ডা দিতে থাকি চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে।প্রতি কাপ চা ছিলো ৫ টাকা।

৫.৩০ মিনিটে যখন ভোরের আবছা আলো ফুটতে শুরু করে তখন আমরা শহরের দিকে হাটা শুরু করি। কিছুদুর হাটার পরেই আমরা একটা অটোরিক্সা ভাড়া করি ঢেউটুকুন ঘাটে যাওয়ার জন্য। জনপ্রতি ৫০ টাকা লেগেছিলো।

অটোতে করে যেতে যেতে ভোরের অমায়িক সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে যাই আমরা। সুর্যের আলো এবং ভোরের আবছা কুয়াশা একসাথে মিশে খুব সুন্দর একটা দৃশ্য দেখার সৌভাগ্য হয়েছিলো।

রাস্তার অবস্থা বেশিরভাগই ভালো ছিলো কিন্তু ঢেউটুকুন ঘাটের ১/২ কিলোমিটার ভাঙ্গা ছিলো। পথের সুন্দর দৃশ্য দেখতে দেখতে আমরা পৌঁছে যাই ঢেউটুকুন ঘাটে। সেখানে আমরা ৫ টাকা দিয়ে নৌকায় করে নদী পার হই।নদী পার হয়ে আমরা যেহেতু সবাই ক্ষুদার্ত ছিলাম তাই নাস্তা করতে একটা হোটেলে ঢুকি। পরটা ডাল ভাজি দিয়ে নাস্তা করে আমাদের জনপ্রতি বিল আসে ১৮ টাকা

এবার দুর্গাপুর যাওয়ার পালা। আবার আমরা একটা অটোরিক্সা ভাড়া করি যেটাতে খরচ হয় জনপ্রতি ৫০ টাকা। দুর্গাপুর যেয়ে আমাদের কংশ নদী পার হতে হবে কারণ কংশ নদী পার হলেই আমরা আমাদের আসল গন্তব্য পেয়ে যাবো। তাই আমরা আবার সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে করতে দুর্গাপুর যেতে থাকি।
দুর্গাপুর যেয়ে আমরা আবার নৌকা ঘাট থেকে জনপ্রতি ৫ টাকা দিয়ে নৌকা পার হই। নদী পার হয়েই আমরা পৌঁছে যাই বিজয়পুরে। এবার সবগুলো স্পট ঘুরে দেখার জন্য অটোরিক্সা রিজার্ভ করার পালা। শুরু হয় দামদামি এবং সবশেষে একটা অটোরিক্সা আমাদের ৮০০ টাকা দিয়ে সবগুলো স্পট ঘুরিয়ে দেখানোর জন্য রাজি হয়। যেহেতু আমরা ৮ জন ছিলাম তাই আমাদের এখানে জনপ্রতি ১০০ টাকা করে ভাগে পরে। প্রথমেই আমরা চলে যাই চিনামাটির পাহাড়,সাদামাটির পাহাড়,গোলাপি পাহাড় দেখার জন্য। এই ৩ টা একই জায়গায় অবস্থিত। 
চীনামাটির লেক
চীনা মাটির পাহাড়

গোলাপি পাহাড়

চীনামাটির পাহাড়ের উপর থেকে ভিউ


জায়গাগুলো এত সুন্দর যে ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। আত্নিক প্রশান্তি পাচ্ছিলাম একটা। বেশ কিছুক্ষন এখানে কাটানর পর আমরা চলে যাই রানিখং মিশন এবং সাধু যোসেফের ধর্মপ্ললী তে। সেখান থেকে ইন্ডিয়ান বর্ডার দেখা যাচ্ছিলো
রানিখং মিশন
তারপর সেখান থেকে আমরা চলে যাই বিজয়পুর বিজিবি ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে। বিজিবি ক্যাম্প এতো সুন্দর ভাবে সাজানো যা না দেখলে বুঝার উপায় নেই। ্সাধারণত বিজিবি ইন্ডিয়ান বর্ডারের কাছে অর্থাৎ জিরো পয়েন্টে যাওয়ার অনুমতি দেয় না কিন্তু আমরা রিকোয়েস্ট করায় তারা আমাদের জিরো পয়েন্টে যেতে দেয়। জিরো পয়েন্টে যাওয়ার রাস্তা থেকে শুরু করে আশে পাশের ভিউ সবকিছু স্বপ্নের মতো সুন্দর ছিলো। আচ্ছা একটা কথা চিন্তা করুন তো? একপাশে গারো পাহাড়,এক পাশে মেঘালয় এক পাশে আসাম আর মাঝখানে বাংলাদেশে দাড়িয়ে আপনি। কেমন অনুভূতি হবে আপনার? হ্যা,ঠিক এমনটাই অনুভব করেছিলাম আমি জিরোপয়েন্টে দাড়িয়ে।
জিরো পয়েন্ট

বাংলাদেশি বর্ডার রেখা

ঐ দেখা যায় ইন্ডিয়া

জিরো পয়েন্ট ঘুরা শেষে আমরা চলে আসি বিজিবি ক্যাম্পে। বিজিবি ক্যাম্পের সামনেই ছিলো সোমেশ্বরী নদী। সোমেশ্বরী নদীর এই পাড়ে বাংলাদেশ আর ঐ পাড়ে ইন্ডিয়া। মাঝখানে "নো ম্যান্স ল্যান্ড" । এরকম একটা জায়গায় বসে আড্ডা দিতে কার না ভালো লাগবে বলুন? তাই আমরা প্রায় ঘণ্টা খানেক এই জায়গায় শুয়ে আড্ডা দেই।
সোমেশ্বরী নদী

আত্নিক প্রশান্তি

আড্ডা দেওয়া শেষে আমরা গোসল করার জন্য নেমে পড়ি সোমেশ্বরী নদীতে। যেমন পরিষ্কার পানি ঠিক তেমনই ঠান্ডা পানি। পানিতে সব বন্ধুরা মিলে অনেক লাফালাফি এবং দাপাদাপি করি। সৃতি হয়ে থাকবে এই মোমেন্ট টা
সোমেশ্বরী নদীতে গোসল করা

গোসল শেষে ফ্রেশ হয়ে আমরা আবার যেখান থেকে অটোরিক্সা রিজার্ভ করেছিলাম সেখানে চলে যাই। অটোরিক্সার ভাড়া মিটিয়ে আমরা আবার ৫ টাকা দিয়ে নৌকা পার হয়ে দুর্গাপুর চলে যাই । দুপুর হয়ে যাওয়ায় সবারই অনেক ক্ষুদা লাগে তাই দুর্গাপুর বাজারে একটা হোটেলে আমরা লাঞ্চ করতে ঢুকি। দুপুরে লাঞ্চের মেন্যু ছিলো ভাত,ডাল,মুরগীর মাংস,টাকি মাছ ভর্তা। জনপ্রতি খরচ হয় ৭০ টাকা। তারপর সেখান থেকে বের হয়ে আমরা রিক্সা ঠিক করি "কালচারাল একাডেমি" দেখতে যাওয়ার জন্য। রিক্সাভাড়া ছিলো ২৫ টাকা। একটা রিক্সায় দুইজন বসায় আমাদের খরচ হয় জনপ্রতি ১২ টাকা

কালচারাল একাডেমিতে সুসং দুর্গাপুরের ঐতিহ্য,সংস্কৃতি এবং আদিবাসী জাদুঘর ঘুরে দেখি।

কালচারাল একাডেমী জাদুঘর 

এবং এই জাদুঘর ঘুরার মাধ্যমেই আমরা আমাদের দর্শনীয় সকল জায়গা দর্শন সম্পন্ন করি। এবার ঢাকায় ফিরার পালা। যেহেতু নেত্রোকোণা থেকে রাতের বেলা কোনো ট্রেন ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেঁড়ে যায় না এবং নেত্রকোনা থেকে ঢাকার "by road" রাস্তা খুবই খারাপ তাই আমরা ময়মনসিংহ যাবো বলে ঠিক করি। নেত্রোকোনোর জারিয়া বাজার রেলওয়ে স্টেশন থেকে ময়মনসিংহ গামী ট্রেন ছিলো সন্ধ্যা ৬ টায়। তাই আমরা দেরি না করে আবারো অটোরিক্সায় জারিয়া যাওয়ার জন্য ঠিক করে ফেলি। জনপ্রতি ভাড়া পরে ৩০ টাকা করে। ৫.৩০ টায় আমরা জারিয়া বাজারে পৌঁছে যাই এবং ময়মনসিংহে যাওয়ার জন্য ট্রেনের টিকিট কাটি জনপ্রতি ২০ টাকা দিয়ে। বলে রাখা ভালো এটা লোকাল ট্রেন তাই আগে বসলে আগে সিট পাবেন এরকম নিয়ম। ৬ টার ট্রেন একঘণ্টা ১০ মিনিট লেট করে ৭.১০ এ আসে এবং জারিয়া ত্যাগ করে ৭.২০ মিনিটে। প্রায় ২ ঘণ্টা ট্রেন জার্নি করে আমরা ময়মনসিংহে পৌঁছাই ৯ টা ১৫ মিনিটে।

ময়মনসিংহ রেলওয়ে ষ্টেশনে নেমে আমরা অটোতে করে মাসকান্দা বাস স্ট্যান্ডে চলে যাই।জনপ্রতি অটোতে খরচ হয় ১০ টাকা করে। আমাদের এনা পরিবহণ অথবা সৌখিনে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও ২ টার একটা বাসও পায় নি কারণ ওদের লাস্ট ট্রিপ ছিলো ৯,১৫ তে যেটা আমরা পৌঁছানোর পূর্বেই ছেঁড়ে চলে যায়।তাই বাধ্য হয়ে অন্য একটি অপারেটরের ১০.৩০ টার গাড়িতে আমরা টিকিট কাটি। টিকিট মূল্য নিয়েছিলো জনপ্রতি ২২০ টাকা। বাকিটা সময় বাসের জন্য অপেক্ষা করতে করতে আর আড্ডা দিতে দিতে কফি খেয়ে কাটিয়ে দেই। কফির মূল্য ছিলো ১০ টাকা। 

ঠিক ১০.৩০ এ আমাদের বাস টার্মিনাল ত্যাগ করে। আমরা ভেবেছিলাম বাস লোকালের মতো যাবে কিন্তু আমাদের অবাক করে দিয়ে বাসটি মাত্র ২ ঘণ্টা ১৫ মিনিটে আমাদের মহাখালি নামিয়ে দেয়। অর্থাৎ ১২.৪৫ এ আমরা ঢাকার মহাখালি বাস স্ট্যান্ডে নেমে যাই এবং যার যার বাসায় চলে যাই।

মোটামোটি এইছিলো আমাদের ১ দিনের ডে ট্যুরের কাহিনী।এবার চলুন খরচের হিসাব টা মিলিয়ে ফেলি -
১৬৫+৫+৫০+৫+১৮+৫০+৫+১০০+৫+৭০+১২+৩০+২০+১০+২২০+১০ = ৭৭৫ টাকা ।

এই ট্যুরের আরো ছবি দেখতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন এই লিংক থেকে - বিজয়পুর ট্যুর

2 comments:

  1. Vaiya Thank You So Much
    For represent Our Zila Netrokona
    If You come Again Please Knock Me
    01817493884

    I am your A Normal Fan

    ReplyDelete
  2. It's 6 nov 2022.
    In sha Allah tomorrow i'll go netrokona with your guide.
    Thank you so much Araf Intisar Dipto Vhaiya❤️

    ReplyDelete